সবজির বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হলেও চড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের বাজার। মাত্র দুদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৪০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, সরবরাহ কম এবং পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। তবে কয়েক দিনের মধ্যে শীত মৌসুমের নতুন সরবরাহ শুরু হলে দাম কিছুটা কমতে পারে বলে আশা করছেন তারা।
সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা ও ফরিদপুরের পেঁয়াজ ১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা পেঁয়াজের এই দামে বিস্ময় প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, ভারতে পেঁয়াজের দাম অনেক কম, আর দেশে দাম ১৫০ টাকা।
অনেক ব্যবসায়ী এমন পরিস্থিতিতে আমদানির বিকল্প দেখছেন না। পেঁয়াজ বিক্রেতা আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এখন নতুন পেঁয়াজ আসতে খুব বেশি সময় লাগবে না, তবে রাতারাতি যদি আরও বেশি বেড়ে যায়, তখন আমদানি লাগবে।’
এর আগে দামের লাগাম টানতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানি পরিকল্পনা করলেও তাতে বাদ সাধে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুক্তি ছিল, নভেম্বরের মাঝামাঝিতেই নতুন উৎপাদিত দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসবে; কিন্তু প্রক্ষেপণের প্রায় মাসখানেক সময় পেরিয়ে গেলেও বাজারে দেশি পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। আর এদিকে বাজারে আবার অস্থিরতা শুরু হয়েছে।
তবে বাজারে অল্প পরিমাণে আসতে শুরু করেছে পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ, যা ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে কমতে শুরু করেছে সবজির দাম। শীতকালীন সবজি বাজারে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। তুলনামূলক কমেছে সবজির বাজার দর। গত সপ্তাহের তুলনায় অন্তত সর্বোচ্চ ১০ টাকা পর্যন্ত দাম কমতে দেখা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়স, চিচিঙ্গা ও পটোল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। যেগুলো সপ্তাহ আগেই অন্তত ১০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছিল।
শীতকালীন সবজির মধ্যে বড় আকারের ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম কিছুটা কম দেখা গেছে। প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, আর ছোট আকারেরটা ৩০ টাকায়।
তবে বাজারে কমেনি করলার দাম, আগের মতোই ৮০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এ ছাড়াও বরবটি, লাউ, আর কচুর লতি বাজারে আগের দরেই বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। মূলা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি দরে।
এ দিকে সপ্তাহ তিনেক আগে ১৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া শিম বর্তমানে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহেও ক্রেতাদের কিনতে হয়েছে ৮০ টাকায়। এ ছাড়াও স্থিতিশীল রয়েছে বেগুনের দরে। লম্বা ও সবুজ বেগুন ৬০ টাকা, তাল বেগুন ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বাজারে। অথচ সপ্তাহখানেক আগে ক্রেতাদের কিনতে হয়েছে আরও ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেশি দিয়ে।
বাজারে দেশি গাজর ২০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায় এবং দেশি টমেটোর দাম ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা কেজি দরে। তবে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে উচ্ছে, প্রতি কেজি ১০০ টাকায়। তবে সপ্তাহখানেক আগে আরও ২০ টাকা দর বেশি ছিল সবজিটির। আগের মতো প্রতি কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। তবে ক্রেতারা পেঁপে কিনতে পারছেন ৩০ টাকা কেজি দরে।
এদিকে ৪০-৬০ টাকা কেজিতে নেমেছে কাঁচা মরিচ। সপ্তাহ দুয়েক আগে ১২০ টাকা ও এক সপ্তাহ আগে ৮০ টাকা কেজিতে কিনতে হয়েছে ক্রেতাদের।
মরিচ বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আজ সাপ্লাই বেশি তাই দাম কম। এমনিতে ৮০ টাকার ওপরে বিক্রি করি।’
বাজারে ২০ টাকার মতো বেড়েছে রসুন ও আদার দাম। প্রতি কেজি চায়না রসুন ১৮০ ও দেশি রসুন ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, আর দেশি আদা ১৬০ ও চায়না আদা ২০০ টাকা কেজি দরে কিনছেন ক্রেতারা।
স্থিতিশীল ডিম, আরও কমেছে ব্রয়লার
ফার্মের মুরগির এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে আগের মতোই ১২০ টাকায়। যা খুচরা বাজারে হালি হিসেবে ৪০ টাকায় কিনতে পারছেন ক্রেতারা। আর সাদা ডিম ডজন প্রতি ১১০ টাকা। খুচরা বাজারে হালি প্রতি ৩৭ টাকাতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। হাঁসের ডিমের দরও আগের মতো ২১০ টাকা ডজন দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ দিকে দুই সপ্তাহে ২০ টাকার মতো কমেছে ব্রয়লার মুরগিতেও। বাজারে এখন ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৬০ টাকা এবং হাইব্রিড সোনালি ২৩০ টাকায় কিনতে পারছেন ক্রেতারা।
মুরগি বিক্রেতা মো. নাইম বলেন, ‘দাম এখন অনেক কমে গেছে। বাজারে মুরগি অনেক বেশি আছে। সেই তুলনায় ক্রেতা কম।’

