আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জেপি), ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিসহ (জাপা) ১৬টি দল ‘জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক জোট’ গঠনে একমত হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের মন্ত্রী ছিলেন মঞ্জু ও আনিস। বাকি দলগুলোর অধিকাংশ আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিল।
৩০নভেম্বর রাজধানীর গুলশানে হাওলাদার টাওয়ারে দলগুলোর মতবিনিময় সভা হয়। জোটের মুখপাত্রের দায়িত্ব পেয়েছেন জাপার (আনিস) মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। আগামী ৬ ডিসেম্বর জোটটি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।
ব্যারিস্টার আনিস সভায় বলেন, ‘দেশ আজ বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে বিভক্ত। আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে, যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করি, তাহলে ভালো ফলের সম্ভাবনা আছে। জোটের মূল মন্ত্র হবে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, উদার গণতন্ত্র ও সকল ধর্মের মানুষের সহাবস্থান।’
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার প্রথম মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাপার মহাসচিব মঞ্জু। দুই বছর তিনি এরশাদকে ছেড়ে জেপি নামে পৃথক দল গড়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে থেকে যান। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে দলটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দেয়। সেবার বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হয়ে, ফের মন্ত্রী হন মঞ্জু। রাতের ভোটখ্যাত ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোটের প্রার্থী হয়ে এমপি হন। তবে ডামি নির্বাচন খ্যাত চব্বিশের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়েও হেরে যান।
বিএনপির হয়ে রাজনীতি শুরু করা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ২০০৮, ২০১৪, ২০২১৮ এবং ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ জোটের হয়ে এমপি হন। ২০১৪ সালে মন্ত্রী হন। ২০২৪ সালে হন বিরোধীদলীয় উপনেতা। জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর, নেতৃত্ব নিয়ে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে বিরোধে একই নামে দল করেন ব্যারিস্টার আনিস। তাঁর নেতৃত্বাধীন অংশকেই মূল জাপা বলে দাবি করছেন।
গত চার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমঝোতা করে অংশ নেওয়ায় ফ্যাসিবাদের দোসর তকমা পেয়েছে, শেখ হাসিনার সময়ে ‘গৃহপালিত বিরোধীদলের’ ভূমিকার কারণে সমালোচিত জাপা। দলটি একাংশ যোগ দিয়েছে আনিসুলের জাপার। এই দলটি নতুন জোটের উদ্যোক্তা।
মতবিনিময় সভায় ব্যারিস্টার আনিসের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘আমরা ঐক্যের রাজনীতি করি। অন্তর্বর্তী সরকার বিভাজনের রাজনীতি করছে।’
সভায় অংশ নেন জনতা পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন, মহাসচিব সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, জাপার (মতিন) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ এন এম সিরাজুল ইসলাম, মুসলিম লীগের সভাপতি মহসিন রশিদ, এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ সালাউদ্দিন সালু, নেজামে ইসলাম পার্টির একাংশের নির্বাহী সভাপতি মাওলানা আশরাফুল হক, ইসলামিক জোটের চেয়ারম্যান আবু নাসের ওহেদ ফারুক, জাতীয় সংস্কার জোটের সভাপতি মেজর (অব.) আমীন আহমেদ আফসারী, মানবাধিকার পার্টির চেয়ারম্যান আখতার হোসেন, জাগপার একাংশের সভাপতি মহিউদ্দিন বাবলু প্রমুখ। জনতা পার্টি, জাপা (মতিন), মুসলিম লীগ, এনপিপির নেতারা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, বৃহত্তর জোট গঠনে ১৬ রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য হয়েছে।
সভায় বক্তৃতা করেন জাপার (আনিস) জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা প্রমুখ।

