চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গণসংযোগের সময় গুলির ঘটনায় আহত হলেও তিনি মূল টার্গেট ছিলেন না বলে জানাচ্ছে পুলিশ।
সে ঘটনায় যে ব্যক্তি নিহত হয়েছেন তিনিই আসলে মূল টার্গেট ছিলেন- বলা হচ্ছে পুলিশের পক্ষ থেকে। নিহত সরোয়ার হোসেন বাবলা সন্ত্রাসী ছিলেন বলে পুলিশ দাবি করে বলছে, ‘ভাড়াটে খুনি’ এনে হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে।
চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ জানান,যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে তারা কোনো নির্দিষ্ট দলের ক্যাডার না, যখন যেখানে সুবিধা সেদিকে কাজ করে। এদের ভেতরে কিছু হায়ারড কিলার (ভাড়াটে খুনি) আছে বলে আমাদের সন্দেহ। দেশের বাইরেও এদের লোকজন আছে।
এদিকে, বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। নিহত ব্যক্তির সঙ্গে তাদের দলের কোনো সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করছেন বিএনপি নেতারা। বরং, সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তাক করে তারা বলছেন, অবৈধ অস্ত্র বিরোধী কোনো অভিযান না চালানোয় এ ধরনের গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে।
চট্টগ্রামের ঘটনার ‘তীব্র নিন্দা’ জানিয়ে বিবৃতি হামলাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ভিডিওতে যা দেখা যাচ্ছে
ঘটনাটির সময়কার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে যেখানে জনসংযোগ চলার মাঝে হঠাৎ একজনের পেছনে ঘাড়ের কাছে পিস্তল দিয়ে গুলি চালাতে দেখা যায়। যদিও কে গুলি চালিয়েছে সেটা সেই সেলফি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওতে আসেনি। যিনি ভিডিও করছিলেন তিনি বন্দুকধারীর ধাক্কায় কিছুটা এগিয়ে যান বলেও মনে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম শহরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলীর খন্দকারপাড়া এলাকায় একটি মসজিদে মাগরিবের নামাজ শেষে নির্বাচনী প্রচারণার সময় গুলির এই ঘটনা ঘটে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ঘাতকদের একজনকে তিনি মসজিদেই দেখেছেন।
এই ঘটনায় যিনি নিহত হয়েছেন, সেই সরোয়ার বাবলার বাবা আবদুল কাদের বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধী পক্ষ তাকে ফোনে হুমকি দিয়ে আসছিলো।
তবে ঘটনাটি “গ্যাং ফাইটের অংশ হতে পারে” বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। এর পেছনে চাঁদাবাজি এবং দখলদারি মূল মোটিফ বলেও তাদের ধারণা।
“বিএনপির প্রার্থী টার্গেট ছিলেন না। যে মারা গেছে সেও টপ টেরর ছিল, দশ বছর জেল খেটেছে, তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ ১০-১৫ টা মামলা ছিল” বলছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ।সেখানে জনসংযোগ সম্পর্কে থানায় কোনো তথ্য না থাকায় সেখানে পুলিশের উপস্থিতিও ছিল না বলে জানান তিনি।
বিএনপি যা বলছে
৫ নভেম্বরের এই ঘটনায় নিহত সরোয়ার হোসেন বাবলার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করছে বিএনপি, তবে তার সাথে বিএনপি নেতাদের সম্পর্কের বিষয়ে জানা যাচ্ছে স্থানীয়ভাবে।
সামাজিক মাধ্যমে একটি ছবিতে সরোয়ার বাবলার একটি বিলবোর্ডের মতো পোস্টার দেখা যায় যেখানে স্থানীয় বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর কারামুক্তিতে ‘শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন’ জানানো হয়েছে। মাসখানেক আগে বাবলার বিয়ের অনুষ্ঠানে বিএনপির কয়েকজন নেতাও উপস্থিত ছিলেন।
এ নিয়ে অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বর্তমানে চট্টগ্রাম-১০ আসনের জন্য মনোনীত প্রার্থী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “ব্যক্তিগত সম্পর্ক কার কী আছে সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু দল হিসেবে বিএনপিতে তার কোনো মেম্বারশিপ নাই, সে কোনো পদেও নাই। ব্যক্তিগতভাবে সম্পর্ক তো অনেকের অনেকের সাথে আছে, এর সাথে বিএনপির রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নাই”।

