জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে পেশাজীবী মায়েদের কাজের সময় ৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৫ ঘণ্টা করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দলটির আমির শফিকুর রহমান। ২৬ অক্টোবর নিউ ইয়র্ক সিটিতে ‘কোয়ালিশন অব বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন’ আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী সুযোগ পেলে মায়েদেরকে ‘বাড়তি আরেকটু সম্মান’ করবে, যা হবে তাদের প্রতি ‘ইনসাফ’।
“আমার মা; তিনি তার গর্ভে সন্তান নিচ্ছেন, সন্তানকে বুকের দুধ দিচ্ছেন, তার বুকটাকে সন্তানের জন্য বিছানা বানাচ্ছেন, এই সন্তানকে লালন পোষণ করছেন। আবার তিনি ক্ষেত্রবিশেষে একজন পেশাজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আমারও আট ঘণ্টা, তারও আট ঘণ্টা। এটা কি তার উপর অবিচার নয়?
“আমরা গেলে ইনশাআল্লাহ তাদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেব। তার সন্তানের হক আদায় করার জন্য এবং মা হিসেবে তাকে সম্মান করার জন্য। এটাই হবে তাদের প্রতি ইনসাফ। এটা কোনো দয়া নয়।”
শফিকুর রহমান বলেন, “ইনশাআল্লাহ। আমরা যদি আট ঘণ্টার জায়গায় তাদের জন্য পাঁচ ঘণ্টা করি, তাহলে মায়েরা এতই সিনসিয়ার, এতই কমিটেড। তারা চিন্তা করবে যে সরকার যে দেশ আমাদেরকে সম্মান দিয়েছে আমাদের উচিত আট ঘণ্টার কাজ পাঁচ ঘণ্টায় শেষ করা।”
জামায়াতের আমিরের এমন প্রতিশ্রুতির পর সোশাল মিডিয়ায় চলছে নানামুখী আলোচনা। অনেকে তার ওই বক্তব্যের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ ভাবছেন, এটা হবে নারীদের পর্যায়ক্রমে ‘গৃহবন্দি’ করার প্রথম ধাপ।
নারীদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিলে পুরুষদের প্রতি ইনসাফ করা হবে কি না, সেই প্রশ্ন কেউ কেউ তুলেছেন। আবার কর্মজীবী নারীদের অনেকে জামায়াত আমিরকে পরিবহন সমস্যা, কর্মপরিবেশ, শিশুদের ডে কেয়ার সেন্টারের মত বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
অনেকে আবার জামায়াত আমিদের প্রস্তাবকে একটি ‘মহৎ ভাবনা’ হিসেবে দেখছেন। কয়েক জন ফেইসবুকে বলেছেন, নারীদের কর্মঘণ্টা কমানো এখন ‘সময়ের দাবি’।
কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন কর্মজীবী নারীদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিলে বেতনও আনুপাতিক হবে কী না? বেতন যদি কমানো হয়, নারীরা সেই ‘ইনসাফ’ চায় কি না। আর বেতন না কমালে পুরুষ সহকর্মীরা এই বৈষম্য মানবে কি না? আশঙ্কা তৈরি হয়েছে আদৌ কি কোন প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন বিভাগে কোন নারীকে চাকরি দিতে আগ্রহী হবে?
প্রগতিশীল নারীদের মতে নারীর জন্য সহানুভূতি নয়, প্রয়োজন সমতা ও সুবিচার। যদি কেউ সত্যিই নারীর জীবন সহজ করতে চান তবে অফিসে ৫ ঘণ্টা নয়, রাস্তা, পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
 
		

