ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে গন্ডগোল লাগানোর চেষ্টা করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ২৩অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ তাজুল ইসলাম এ কথাগুলো বলেন। শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। তাজুল ইসলাম বলেছেন, রাষ্ট্রের মধ্যে শেখ হাসিনা একটা সিভিল ওয়ার (গৃহযুদ্ধ) লাগানোর চেষ্টা করেছেন। সেনাবাহিনীকে বলার চেষ্টা করেছেন, তোমাদের অফিসারদের বিচার হয়, তোমরা কেন রুখে দাঁড়াচ্ছ না?
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হয়েছেন। ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, যাঁরা এখানে আসামি হয়েছেন, তাঁদের (শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান) মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। এত বড় অপরাধ করেছেন, দুনিয়ার সবাই জানে এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তিনিও জানেন; কিন্তু কখনোই তাঁর মধ্যে কোনো ধরনের অনুশোচনা পরিলক্ষিত হয়নি। উল্টো তিনি যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, সাক্ষ্য দিচ্ছেন, তাঁদের হত্যা করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের বাড়িঘর ধ্বংস করে দেওয়ার কথা বলছেন। তাঁদের লাশগুলো বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়ার কথা বলছেন। তাজুল ইসলাম বলেন, সর্বশেষে তিনি (শেখ হাসিনা) রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে গন্ডগোল লাগানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি সেনাবাহিনীকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সেনাবাহিনীকে বলার চেষ্টা করেছেন, তোমাদের অফিসারদের বিচার হয়, তোমরা কেন রুখে দাঁড়াচ্ছ না? রাষ্ট্রের মধ্যে একটা সিভিল ওয়ার (গৃহযুদ্ধ) লাগানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সেই পাতা ফাঁদে পা দেয়নি। বাংলাদেশের জনগণ সেই পাতা ফাঁদে পা দেয়নি। যারা পারপিট্রেটর (অপরাধী) ছিল, তাদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য তাদের অঙ্গীকারের প্রতি দৃঢ় আছেন। আদালতে তাদের নিয়ে এসেছেন। বিচারের প্রক্রিয়া স্মুথলি সামনে পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কোনো উসকানিতে কেউ পা দেয়নি। চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, এ রকম নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ, পুরো প্রজন্মকে হত্যা করে ফেলার চেষ্টা, ৩৫ হাজার মানুষকে আহত করা, অঙ্গহানি করা, এরপরও সামান্যতম রিমোর্স (অনুশোচনা) না থাকা। এখানে শিশু ছিল, নারী ছিল, মজুর ছিল, ছাত্ররা ছিল, তাদের হত্যা করতে তাঁর বুক কাঁপেনি। এখন পর্যন্ত তাঁর মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। সুতরাং সর্বোচ্চ শাস্তিটা তাঁর অবশ্যই প্রাপ্য।
এদিকে, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, গণহত্যায় জড়িত শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিচার না হলে জুলাই শহীদ-আহতদের ওপর অবিচার করা হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে সর্বশেষ দিনের যুক্তিতর্ক তুলে ধরার সময়ে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করেছিলাম, শেখ হাসিনা ন্যায়বিচারের মুখোমুখি হবেন। কারণ তিনি অন্যের উদ্দেশে বলেছিলেন, সাহস থাকলে বিচারের মুখোমুখি হন। কিন্তু তিনি এই কথা মন থেকে বলেননি। বললে আজ দেশের মাটিতে এসে বিচারের মুখোমুখি হতেন। মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘এই আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে বাংলাদেশের আরও অগণিত মানুষের জীবন বিপন্ন হবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে না পারলে বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে ভীরু-কাপুরুষ হয়ে রয়ে যাবে। আমি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করছি।’ তার বক্তব্যের পর ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। দুই পক্ষই যেকোনো মূল্যে ন্যায়বিচার পাবে।’ এর আগে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবার, আহত, চিকিৎসকসহ ৫৪ জন সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্যে উঠে আসে– জুলাই গণহত্যা, নৃশংসতা, আওয়ামী লীগের আমলে গুম-খুনসহ নির্যাতনের নানা বিষয়।
 
		

