জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রেফারির ভূমিকায় থেকেও এক পক্ষের হয়ে গোল দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে ১৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত জুলাই সনদের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেনি।সরকার ও দু-তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একই পক্ষে কমিশনের অবস্থান দেখা যাচ্ছে, যা রেফারির নিরপেক্ষ ভূমিকার পরিপন্থী।
২৯ অক্টোবর দুপুরে বিএনপি আয়োজিত একটি গোলটেবিল বৈঠকে সালাহউদ্দিন আহমদ এসব কথা বলেন। ‘ফ্রম রুল বাই পাওয়ার টু রুল অব ল: ট্রানজিশন টু আ ডেমোক্রেটিক বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই বৈঠক রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়।
ঐকমত্য কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘ কমিশন সরকারকে যে সুপারিশ দিয়েছে, তাতে তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।’
সালাহউদ্দিন আহমদ মন্তব্য করেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারকে সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তাঁরা কিছু সত্য আবিষ্কার করতে পেরেছেন। এত দিন তাঁরা মনে করতেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রেফারির ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু তারা যে সুপারিশ দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, এর মধ্যে একজন দস্তখতকারী প্রধান উপদেষ্টাও আছেন, যিনি কমিশনের সভাপতি। ফলে এটি সরকারের পক্ষ থেকেও একধরনের অনুমোদন বা সমর্থন।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘রেফারিকে আমরা কখনো গোল দিতে দেখিনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ঐকমত্য কমিশন, সরকার এবং আরও দু-তিনটি রাজনৈতিক দল একই পক্ষ।’
সালাহউদ্দিন আহমদ অভিযোগ করেন, কমিশনের প্রকাশিত ৯৪ পৃষ্ঠার দলিলে ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় স্বাক্ষরিত মূল দলিলটির হুবহু প্রতিফলন নেই। দলিলে কীভাবে ঐকমত্যে পৌঁছানো হলো বা কোনো ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (ভিন্নমত) আছে কি না, তার কোনো উল্লেখ নেই।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সুপারিশে কিছু দলের প্রস্তাব ও ঐকমত্য কমিশনের চিন্তাভাবনা জাতির ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা লক্ষ করা যাচ্ছে। সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হলো, সংবিধান সংশোধনের ৪৮টি দফা প্রস্তাব তফসিল আকারে সংযুক্ত করে গণভোটের কথা বলা হয়েছে, অথচ এই বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি।
সালাহউদ্দিন আহমদ মনে করেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলো ঐক্যের পরিবর্তে জাতিকে বিভক্ত করবে।
সালাহউদ্দিন আহমদ নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বা আরপিওতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিবর্তনের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘এখন অগণতান্ত্রিকভাবে বলা হয়েছে, জোটভুক্ত হলেও নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে।’ এই ধরনের পরিবর্তন ‘অনৈক্য সৃষ্টি করবে’ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিরপেক্ষ হওয়ার দাবি জানান বিএনপির এই নেতা।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা চাই, অন্তর্বর্তী সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় নিরপেক্ষভাবে আচরণ করুক। যাতে জাতি আশ্বস্ত হতে পারে এবং ঐক্য বজায় থাকে। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন ও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ আমাদের হতাশ করেছে।’ তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে জাতিতে ঐক্যের বদলে বিভাজন তৈরি হচ্ছে।’

