মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের বাণিজ্য আলোচনা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। ট্রুথ সোশালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, শুল্ক নিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের নেতিবাচক কথা সম্বলিত একটি বিজ্ঞাপন চালিয়েছে কানাডা, সে কারণেই তিনি এ পদক্ষেপ নিয়েছেন। “তাদের এই গর্হিত আচরণের ভিত্তিতে, কানাডার সঙ্গে সব বাণিজ্য আলোচনা এখনই সমাপ্ত ঘোষণা করা হল,” বৃহস্পতিবার রাতে তিনি এমনটাই লিখেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর যে শুল্ক আরোপ করেছেন তাতে এখন কানাডা থেকে আমদানি হওয়া পণ্যে ৩৫% শুল্ক দিতে হচ্ছে। তবে নিজের প্রথম মেয়াদে দুই প্রতিবেশী মেক্সিকো ও কানাডার সঙ্গে যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেছিলেন, তার আওতায় থাকা পণ্যগুলো এই শুল্ক থেকে ছাড় পাচ্ছে। রিগানের যে ভিডিও ঘিরে ট্রাম্প ক্ষেপেছেন সেটি কয়েকদিন আগে প্রচার করেছে অন্টারিও রাজ্য সরকার। তাতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট যখন শুল্ক নিয়ে নেতিবাচক কথা বলছিলেন, তখন নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা উভয় দেশের পতাকাশোভিত ক্রেনসহ বেশকিছু চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে।
ভিডিওতে রিগানের যে কথাটুকু সন্নিবেশিত হয়েছে, তা নেওয়া হয়েছে ১৯৮৭ সালে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক রেডিও ভাষণ থেকে। ভাষণের ওই অংশে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে কথা বলছিলেন। “যখন কেউ বলে যে চলো বিদেশ থেকে আমদানিতে শুল্ক বসাই, দেখে মনে হয় সে যেন মার্কিন পণ্য ও চাকরির সুরক্ষায় সাচ্চা দেশপ্রেমিকের মতো কাজ করছে। কখনো কখনো খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য এটা কাজেও দেয়, কিন্তু সেটা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যই। “বাণিজ্যে এই ধরনের বিধিনিষেধ দীর্ঘমেয়াদে প্রত্যেক মার্কিন নাগরিক, কর্মী ও ভোক্তাকে ভোগাবে। উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করলে অবশ্যম্ভাবী অন্যান্য দেশও পাল্টা পদক্ষেপ নেবে, তাতে শুরু হবে তুমুল শুল্ক যুদ্ধ। বাজার সঙ্কুচিত হয়ে ধসে পড়বে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে, লাখ লাখ লোক চাকরি হারাবে,” বলেছিলেন রিগান।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা এই ভিডিও বিজ্ঞাপনের সঙ্গে অন্টারিওর প্রধানমন্ত্রী ডাগ ফোর্ড লেখেন, “আমরা কখনোই কানাডার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া শুল্কের বিরুদ্ধে যুক্তি তুলে ধরা থামাবো না।” এর পাল্টায় এক্সে দেওয়া পোস্টে রোনাল্ড রিগান ফাউন্ডেশন বলেছে, অন্টারিও সরকার সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুল্ক নিয়ে করা মন্তব্যের মধ্যে ‘বাছাই করা অডিও ও ভিডিও’ ব্যবহার করেছে। “অন্টারিওর সরকার ওই মন্তব্য ব্যবহার বা সম্পাদনা করার কোনো ধরনের অনুমতিও চায়নি,” বিজ্ঞাপনে রিগানের ভাষণকে ‘ভুলভাবে উপস্থাপন’ করা হয়েছে দাবি করে বলে তারা। এই ঘটনায় কী কী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে ফাউন্ডেশন। এ বিজ্ঞাপন ও ট্রাম্পের পদক্ষেপ নিয়ে বিবিসি যুক্তরাষ্ট্রে কানাডার দূতাবাস ও অন্টারিও রাজ্য সরকারের মন্তব্য চাইলেও তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া পায়নি।
বিবিসি লিখেছে, সাড়ে ৭ কোটি কানাডিয়ান ডলার খরচে মার্কিন প্রধান প্রধান টেলিভিশন চ্যানেলে চালানো এক প্রচারণার অংশ হিসেবে এই বিজ্ঞাপনটি দেখানো হয়।
অবশ্য কানাডাই প্রথম নয়, ট্রাম্পের বৈশ্বিক শুল্ক আদৌ কাজে দেবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে এ বছরের শুরুর দিকে ওয়াশিংটনের চীন দূতাবাসও রিগানকে নিয়ে কাছাকাছি ধরনের একটি ভিডিও এক্সে পোস্ট করেছিল। ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়া সত্ত্বেও কানাডার পণ্যে ট্রাম্প যে হারে শুল্ক আরোপ করেছেন তা প্রতিবেশী দেশটির রাজনীতিকদের চোখ কপালে তুলে দিয়েছে। তিনি কানাডার পণ্যে খাতওয়ারি আলাদা শুল্কও আরোপ করেছেন। যার মধ্যে আছে ধাতুতে ৫০%, অটোমোবাইলে ২৫%। ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও গাড়ির ওপর হোয়াইট হাউস যে সার্বজনীন শুল্ক বসিয়েছে তাতে কানাডাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দেশটির অসংখ্য লোকের চাকরি গেছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর পড়েছে মারাত্মক চাপ।
 
		

