আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া ২৫ কর্মকর্তার মধ্যে ১৫ জন এখন সেনা হেফাজতে। পরোয়ানা জারির আগ পর্যন্ত তারা সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। একজন অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (এলপিআর) আছেন। ১১ অক্টোবর ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেস এ সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান এ তথ্য জানান। মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলায় ট্রাইব্যুনাল থেকে পরোয়ানা জারির পর এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা এবং সেনা কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার না করায় অনেকের ক্ষোভ প্রকাশের মধ্যে সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, পরোয়ানা এখনো তাঁদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। তবে গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিষয়টি সেনা সদরের নজরে এলে ৮ অক্টোবর সন্ধ্যায়ই একটি সংযুক্তির আদেশ জারি করা হয়। এ আদেশের মাধ্যমে চাকরিরত ১৫ জন এবং এলপিআর ভোগরত ১ জন—এই মোট ১৬ কর্মকর্তাকে ৯ অক্টোবরের মধ্যে সেনা হেফাজতে আসতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এলপিআর ভোগরত কর্মকর্তাসহ ১৫ জন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেনা হেফাজতে আসেন। সেনা সদর জানিয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ সেনা হেফাজতে আসেননি। তাঁর পরিবারের ভাষ্যমতে, তিনি ৯ অক্টোবর সকালে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতে বাসা থেকে বের হন। এরপর আর ফিরে আসেননি। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীর নেওয়া পদক্ষেপ জানিয়ে মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, তাঁকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অনুপস্থিত বা ‘ইলিগ্যাল এবসেন্ট’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁকে খুঁজে বের করতে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তাঁর পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। তিনি যেন অবৈধভাবে দেশত্যাগ করতে না পারেন, তা নিশ্চিত করার জন্য ডিজিএফআই, এনএসআই এবং বিজিবিসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়েছে।
কোন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা
গত ৮ অক্টোবর বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনটি মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলা হচ্ছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গুম—নির্যাতনের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায়। অপরটি হচ্ছে জুলাই গণ—অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায়। তিন মামলায় মোট ৩২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে ২৫ জন সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
“নো কম্প্রোমাইজ উইথ ইনসাফ”
সেনাবাহিনীর এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘সেনাবাহিনী দ্ব্যর্থহীনভাবে বিচারের পক্ষে অবস্থান করে। সেনাবাহিনী ন্যায়বিচারের পক্ষে। “নো কম্প্রোমাইজ উইথ ইনসাফ”। আমরা বিশ্বাস করি, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রসিকিউশনের বক্তব্য অনুযায়ী, কারও বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হলে তখন থেকেই তাঁর আর চাকরিতে থাকার সুযোগ নেই। তাহলে এই ১৫ সেনা কর্মকর্তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত কী হবে—এমন প্রশ্নের উত্তরে মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান বলেন, ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনীতে যে ‘ডিসকোয়ালিফিকেশনের’ কথা বলা হয়েছে, এর সঠিক প্রয়োগবিধি বা ব্যাখ্যা এখনো প্রকাশিত হয়নি। যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। এই বিধান সশস্ত্র বাহিনীতে, বিশেষ করে সেনাবাহিনীতে কীভাবে কার্যকর হবে, সেটা জানতে হবে। পরোয়ানা জারি হওয়া কর্মকর্তাদের হস্তান্তরের বিষয়ে জানতে চাইলে হাকিমুজ্জামান বলেন, তাঁদের নিরাপদ একটি স্থানে রাখা হয়েছে। পরিবার থেকেও আলাদা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিষয়ে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
‘অভিযুক্তদের কেউই সেনাবাহিনীতে ছিলেন না’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অভিযোগপত্রে উল্লেখিত ঘটনাসমূহ যখন সংঘটিত হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে, তখন অভিযুক্তদের কেউই সেনাবাহিনীর সরাসরি কমান্ডের অধীনে কর্মরত ছিলেন না। তাঁরা প্রত্যেকেই ডেপুটেশন বা প্রেষণে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) অথবা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) মতো অন্যান্য সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান বলেন, র্যাব সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। এই বাহিনীর কার্যক্রম বা রিপোর্টিং কাঠামো কোনোভাবেই সেনা সদরের এখতিয়ারভুক্ত নয়। আর ডিজিএফআই সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে পরিচালিত একটি সংস্থা। এটি সেনাবাহিনীর কমান্ড কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং অভিযুক্তদের কর্মকাণ্ড সেনাবাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক কমান্ডের বাইরে সংঘটিত হওয়ায় সে সম্পর্কে সেনা সদরের পক্ষে অবগত হওয়া বা নজরদারি করা সম্ভব ছিল না।
তদন্তে সহযোগিতা
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গুম—সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্তের জন্য গঠিত জাতীয় কমিশনকে সেনাবাহিনী শুরু থেকেই সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে আসছে। কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী সকল প্রকার নথি সরবরাহ করা হয়েছে এবং সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য সেনাসদস্যদের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এই সহযোগিতা চলমান রয়েছে। এমনকি অভিযোগপত্র দাখিলের পরেও কমিশনের চাহিদামতো সেনা সদর থেকে প্রয়োজনীয় নথি সরবরাহ করা হয়েছে। তদন্ত কমিশনের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন এবং পরবর্তী সময়ে ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটরের বক্তব্য উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। এটি কতিপয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নয়।
সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা
ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা করা হয়েছে। গত রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানানো হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোডসংলগ্ন উত্তর দিকে অবস্থিত ‘এম ই এস বিল্ডিং নম্বর—৫৪’কে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হলো। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এ আদেশ জারি করা হলো। আদেশটি অবিলম্বে কার্যকর হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর সেনা সদরে ‘এম ই এস বিল্ডিং নম্বর—৫৪’কে সাময়িক কারাগার ঘোষণার জন্য সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে ওই ভবনকে সাময়িক কারাগার ঘোষণা করা হয়েছে। ১২ অক্টোবর একটি দৈনিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা তিন মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর যে ১৫ কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে, তাঁদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনী নিজেদের হেফাজতে রাখতে চায়। এ বিষয়ে সেনা কর্তৃপক্ষের একটা ভাবনা হলো, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামি হওয়া এসব কর্মকর্তা সেনা হেফাজতে থাকবেন। মামলার নির্দিষ্ট তারিখে সেনাবাহিনী তাঁদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করবে, আদালতের কার্যক্রম শেষে আবার হেফাজতে নিয়ে যাবে। এমন আলোচনার মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করল। তবে এই কারাগারে শুধু বর্তমান কর্মকর্তাদের নাকি সাবেকদেরও রাখা হবে, তা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়নি। আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার যদি কোনো বাড়িকে সাবজেল বা উপকারাগার ঘোষণা করে, সেখানে মামলার আসামি রাখতে পারেন। এমন নজির রয়েছে। কোনো নির্দিষ্ট জায়গাকে সাবজেল (উপকারাগার) ঘোষণা করার ক্ষমতা সরকারের আছে বলে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, কোন জায়গাকে কারাগার ঘোষণা করা হচ্ছে, তা তাঁদের বিবেচ্য বিষয় নয়। তবে আসামিকে গ্রেপ্তার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে আনতে হবে। এরপর আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলে আসামিদের কোন কারাগারে রাখা হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আরও বলেন, আইন হচ্ছে আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে আনতে হবে। আদালতে আনার পরে আদালত যদি ফারদার অর্ডার (পরবর্তী আদেশ) দিয়ে বলেন কারাগারে পাঠান, তখন কারাগার বলতে সেটা কেন্দ্রীয় কারাগারও হতে পারে, সেটা জাতীয় সংসদ ভবনের মধ্যেও হতে পারে, এমপি হোস্টেল হতে পারে বা অন্য কোনো জায়গাকেও যদি সরকার কারাগার ঘোষণা করে, সে জায়গায় পাঠানো যেতে পারে। সেটা জেল বা কারাগার হিসেবে গণ্য হবে।
Dhaka Bureau Office
- 99 Kazi Nazrul Islam (Dhaka Trade Center 5th FL) Kawran Bazar, Dhaka-1215. Bangladesh
USA Address
- 15047 Hillside Ave (2FL) Jamaica, NY-11432
Muhammad Kader
Chairperson, Board of Editors
Manwar Hossain
Managing Editor
Sifa Amin
Editor & Publisher
আমাদের সম্পর্কে
Dhaka Bureau Office
- 99 Kazi Nazrul Islam (Dhaka Trade Center 5th FL) Kawran Bazar, Dhaka-1215. Bangladesh
USA Address
- 15047 Hillside Ave (2FL) Jamaica, NY-11432
Muhammad Kader
Chairperson, Board of Editors
Manwar Hossain
Managing Editor
Sifa Amin
Editor & Publisher
© সর্বসত্ব সংরক্ষিত 2025 weeklybanglagazette || All Rights Reserved
© সর্বসত্ব সংরক্ষিত 2025 Weekly Bangla Gazette || All Rights Reserved.
Published by: Communicate Technology LLC.
 
		

