বাউল জগতের কালজয়ী এক মহাপুরুষের নাম বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম। তাঁর স্মরণে ১৫ নভেম্বর নিউইয়র্কে গুলশান টেরেসে মিলনায়তনে ‘অল কাউন্টি হেল্্থ কেয়ার’র সৌজন্যে ‘শাহ আব্দুল করিম লোক উৎসব’ অনুষ্ঠিত হলো। তাঁর লেখা গানে গানে ধ্বনিত হলো পল্লী বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতির রূপ-রস। আপ্লুত হলেন প্রবাসের বিদগ্ধজনেরা। গানের বাণী ও সুরের মধ্য দিয়ে শাহ আব্দুল করিম দেশ-বিদেশের বাঙ্গালীদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন তা আবারো দৃশ্যমান হলো এই উৎসবের মধ্যদিয়ে। উল্লেখ্য, ভাটি বাংলার অবহেলিত শাহ আব্দুল করিমের সৃষ্টি আজ বিশ্বময় ছড়িয়ে গেছে। ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ দুঃখ প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলে সকল অন্যায়,অবিচার,কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরূদ্ধে। সময়ের ব্যবধানে শাহ আব্দুল করিমের রচনায় পাকিস্তানী শাসকের অপশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অমর সঙ্গীত আজ বাঙালিকে আবারো শানিত করছে। সেই অমর সঙ্গিতটি ছিল ‘শোষক তুমি হও হুঁশিয়ার চলো এবার সাবধানে/তুমি যে রক্তশোষক-বিশ্বাসঘাতক, তোমারে অনেকে চিনে। / প্রাণে আর ধৈর্য্য মানে না দেখে তোর নিতি-বিধান/ মুসলিম লীগ নাম ধরিয়া গড়েছিলে পাকিস্তান/ ভেতরে ঢুকিল শয়তায় গরিবকে মারলে প্রাণে।/স্বার্থসিদ্ধি করবে বলে করেছিলে শয়তানী/না বুঝিয়া ভাইয়ে ভাইয়ে করেছি হানাহানি/ কন্ঠাগত হলো প্রাণি তোমার নিষ্ঠুর শোষনে।’
বাউল শাহ আব্দুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানার উজানধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রায় হাজারের উপর গান রচনা করেছেন। তিনি ছিলেন এক প্রতিবাদী গনসংঙ্গীত শিল্পী। নিগূঢ়তত্ত্ব, ভক্তিগীতি, দেহতত্ত্ব, বিচ্ছেদ, মনঃশিক্ষা,আল্লাহ স্ম^রণ, নবী স্মরণ, মুর্শিদস্মরণ, প্রণয়গীতি, জারি, সারি, ভাটিয়ালী, জীবন তত্ব, প্রেম, জাগরনের গান, আঞ্চলিক, ও দেশের গান সহ বাউল জগতের প্রতিটা পর্যায়ে তাঁর গানের ছুঁয়া লেগেছে। ‘শাহ আব্দুল করিম পরিষদ’র এ অনুষ্ঠানের সুধীজনও গভীর রাতে ঘরে ফিরেছেন পরম তৃপ্তির শ্বাস নিতে নিতে।
উৎসবের জন্যে গঠিত কমিটির আহবায়ক ড. সবিতা দাসের সমন্বয়ে এবং পরিষদের সভাপতি তপন মোদকের সার্বিক তত্বাবধানে অতিথিরা ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন বিপুল করতালির মধ্যে। এ সময় সেখানে ছিলেন খ্যাতনামা এটর্নী মঈন চৌধুরী, আবাসন ব্যবসায়ী নুরুল আজিম এবং তোফায়েল চৌধুরী, কম্যুনিটি লিডার ফাহাদ সোলায়মান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার চুন্নু ও রাশেদ আহমেদ। আরো ছিলেন ‘শাহ আব্দুল করিম পরিষদ’র সাধারণ সম্পাদক মীনা ইসলাম, প্রধান সমন্বয়কারী রামদাস ঘরামি, অ্যল কাউন্টি হেলথকেয়ারের পরিচালক মনিরা মহিউদ্দিন, কো অর্ডিনের শামীমা আক্তার ইতি। বিশিষ্টজনদের মধ্যে আরো ছিলেন বিএনপি নেতা এম এ বাতিন, ভিপি জসিম উদ্দিন, মোহর খান প্রমুখ।
শাহ আব্দুল করিমকে নিবেদিত গানের মধ্যদিয়ে উৎসব শুরু হয়। এপর্বে নেতৃত্ব দেন বহ্নিশিখা সঙ্গীত নিকেতনের প্রধান ও উৎসবের আহবায়ক ড. সবিতা দাস। সাথে ছিলেন রুনা রায়। শাহ আব্দুল করিম স্মরণে স্থানীয় বিশিষ্ট শিল্পীরাও গান পরিবেশন করেন।

