মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বৈবাহিক জালিয়াতি বা ডিভোর্স ছাড়া পুনরায় বিয়ের ঘটনা ইমিগ্রেশন আইনে গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। কেউ যদি আইনগতভাবে বিবাহবিচ্ছেদ না করেই দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন, অথবা শুধুমাত্র গ্রীন কার্ড বা নাগরিকত্বের সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্যে জাল বিবাহে জড়ান, তবে তারা ভিসা, গ্রীন কার্ড বা নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ থেকে আজীবনের জন্য বঞ্চিত হতে পারেন। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যার মধ্যে রয়েছে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাসনের শাস্তি।
ইমিগ্রেশন আইনজীবী অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরি বলেন, মার্কিন ইমিগ্রেশন আইন অনুযায়ী শুধুমাত্র অভিবাসনের সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্যে করা বিয়ে গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। একবার কেউ এই অভিযোগে অভিযুক্ত হলে তা শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যতেও তার জন্য কোনো ধরনের ভিসা বা গ্রীন কার্ড পাওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়। তাই বিবাহ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
জানা গেছে, ইউএসসিআইএস, আইস, এইচএসআই নিয়মিতভাবে এমন মামলার তদন্ত চালায়। তারা দম্পতির সাক্ষাৎকার নেয়। ঘর পরিদর্শন করে এবং নথিপত্র যাচাই করে দেখেন যে বিয়েটি প্রকৃত নাকি কাগুজে। যদি কোনো অসঙ্গতি বা জালিয়াতির প্রমাণ মেলে, তাহলে আবেদনকারীর অভিবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং পরবর্তীতে বহিষ্কারের মুখোমুখি হতে হয়।
আইনজীবীরা বলেন, বিয়ে বা ইমিগ্রেশন আবেদন সংক্রান্ত নথি সঠিকভাবে প্রস্তুত রাখা, সাক্ষাৎকারে সত্যনিষ্ঠ উত্তর দেওয়া এবং শুরু থেকেই আইনগত সহায়তা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই ভুলভাবে ধারণা করেন, কাগজে কলমে বিয়ে করলেই সুবিধা পাওয়া যাবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন বিভাগ এখন প্রতিটি মামলায় বিস্তারিত তদন্ত চালায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিভোর্স ছাড়া পুনরায় বিয়ে করা বা কেবলমাত্র অভিবাসন সুবিধার জন্য জাল বিয়ে করা—দুই ক্ষেত্রেই মার্কিন আইনের দৃষ্টিতে এটি একটি গুরুতর অপরাধ। এমন অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হলে শুধু নাগরিকত্ব নয়, ভবিষ্যতের যেকোনো ভিসা আবেদনও স্থায়ীভাবে বাতিল হতে পারে। তারা সতর্ক করে বলেছেন, এসব অবৈধ কাজ শেষ পর্যন্ত আজীবন বহিষ্কার বা ‘পার্মানেন্ট বার’ এর মতো কঠিন শাস্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
এদিকে সাম্প্রতি পাওয়া তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের মধ্যে কাগুজে বিয়ে বা ‘শাম মেরেজ’ বৃদ্ধি পাওয়ায় ফেডারেল প্রশাসন নজরদারি জোরদার করেছে। ব্রিজপোর্ট, কনেকটিকাটে বিপুল সংখ্যক বিয়ের কারণে অন্তত একজনকে অভিবাসন জালিয়াতির দায়ে দণ্ডিত করা হয়েছে।
আইনজীবীরা বলছেন, এসব বিয়ে গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং ধরা পড়লে স্থায়ীভাবে অভিবাসন সুবিধা হারানো, জরিমানা ও কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈধ দম্পতির ক্ষেত্রেও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের কাছে সম্পর্কের প্রমাণ দেখানো কঠিন। কখনো কখনো দম্পতিদের আলাদা করে ‘স্টোকস ইন্টারভিউ’ নেওয়া হয়, যেখানে পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষুদ্র তথ্য নিয়েও প্রশ্ন করা হয়।
 
		

