ছেলের হাতের ক্ষত দেখে পুলিশে দিলেন মা। ছাত্রদলের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা মো. জোবায়েদ হোসেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন মাহির রহমানকে পুলিশে সোপর্দ করেছেন তাঁর মা রেখা আক্তার। ২০ অক্টোবর সকালে তিনি নিজে বংশাল থানায় গিয়ে ছেলেকে পুলিশের কাছে দিয়ে আসেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের একজন স্বজন। মাহির পুরান ঢাকার আরমানিটোলার বাসিন্দা শাবনাম বর্ষার কথিত প্রেমিক। বর্ষাদের বাসায় টিউশনি করতেন জোবায়েদ। রেখা রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, ১৯ অক্টোবর রক্তাক্ত ও ক্ষত হাত নিয়ে বাসায় ফেরে মাহির। পরে এ অবস্থার কারণ খুলে বলে। কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় সে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়। ২০ অক্টোবর সকালে তাঁকে চকবাজার থানায় নিয়ে যাই। রেখা রহমান বলেন, ‘আমার ছেলে অপরাধ করেছে। তাই আমি তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। ওই ছেলেটিও (জোবায়েদ) তো আরেক মায়ের সন্তান।’ তবে মাহিরকে তাঁর মা থানায় সোপর্দ করেছেন, এই তথ্য পুলিশ স্বীকার না করলেও থানা জানিয়েছে এ হত্যাকাণ্ডে মাহিরসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আমিনুল কবীর তরফদার বলেছেন, ‘আমরা এই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছি। শিগগিরই তা জানানো হবে।’ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হওয়া সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির লালবাগ জোনের উপকমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন সামি বলেন, জোবায়েদ হত্যায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তবে এখনই তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হবে না।
মাহিরের মা রেখা রহমান জানান, ‘সেদিন সন্ধ্যায় ওই ছেলে (জোবায়েদ) টিউশনিতে যাওয়ার পথে মাহিরের সঙ্গে দেখা হয়। সে মাহিকে ডেকে মোবাইল থেকে বর্ষার ছবি মুছে ফেলতে বলে। মাহিরের এক বন্ধুও ঘটনাস্থলে ছিল। একপর্যায়ে মাহির ও জোবায়েদের মধ্যে ঝগড়া বাধে। জোবায়েদ দুর্ঘটনাবশত মারা যায়।’ রেখা রহমান আরো বলেন, ‘আমার ছেলের সাথে ওই মেয়ের (বর্ষা) ৯ বছরের সম্পর্ক ছিল। তারা একই সাথে বড় হয়েছে। পরে তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্ত কিছুদিন আগে ওই মেয়ে আমার ছেলেকে জানায় যে সে আর সম্পর্ক রাখবে না।’
পুলিশের লালবাগ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রেমের কারণেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। জুবায়েদকে হত্যার সময় ঘটনাস্থলে তিনজন ছিলেন। তবে ছুরিকাঘাত করেন মাহির। এদিকে খুনের ১৮ ঘণ্টা পরও মামলা হয়নি। জোবায়েদের পরিবার বলছে, তারা মামলা করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু মামলা করতে পারেনি। জোবায়েদের বড় ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত বলেন, ‘আমরা ছাত্রীসহ ছয়জনের নামে মামলা দিতে চেয়েছি। কিন্তু বংশাল থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) এতজনের নামে মামলা না দেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এতজনের নামে মামলা দিলে হালকা হয়ে যাবে।’ এ বিষয়ে ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, যে কয়েকজনের নামে মামলা দিতে চায় নেব। তবে তাদের বলেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে।
 
		

